ল্যাম্বরগিনি নামটা শোনেননি এমন কার লাভার হয়তো পাওয়া একটু দুস্কর। কারণ অভাবনিয় গতি আর নান্দনিক ডিজাইনের কারনে এই মেশিন মন জয় করে নিয়েছে কার পাগলদের মনে।
আজকে আলোচনা করবো ল্যাম্বরগিনি এবং এর ইতিহাস নিয়ে।
অটোমোবিলি ল্যাম্বরগিনি এসপিএ একটি ইতালীয় বিলাসবহুল স্পোর্টস কার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ,যেটি অডির মাধ্যমে বর্তমানে ভক্সওয়াগেন গ্রুপের একটি সাবসিডিয়ারি।
চলুন এবার একটু ইতিহাসের পাতা উল্টায়।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ফেরুসিও ল্যাম্বরগিনি ইতালিয়ান বিমান বাহিনীরতে একজন মেকানিক হিসেবে কাজ করতেন। এ কাজের জন্য তাকে রোডস নামক একটি নির্জন দ্বীপে থাকতে হয়েছিল, যেখানে তিনি নানা বিমান ও অন্যান্য ধ্বংসপ্রাত যানবাহনের মেরামতের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। সেখানে প্রচুর পরিমাণে বিভিন্নত যানবাহনের পরিত্যক্ত যন্ত্রাদি ছিল যা দিয়ে তাকে ধ্বংসপ্রাপ্ত যানবাহনগুলোকে মেরামত করতে হত।
ফেরুসিও ল্যাম্বরগিনি কিছুদিনের মাঝেই এই কাজে এতোটাই দক্ষ হয়ে গেলেন যে তিনি সেখানকার সবথেকে সেরা মেকানিক হয়ে উঠলেন এবং সেখান থেকেই তিনি ল্যাম্বরগিনি ট্রাক্টর তৈরির সিধান্ত নিলেন।ট্রাক্টর কথাটি শুনে নিশ্চই অবাক হচ্ছেন। তাহলে পড়তে থাকুন। আপনার উত্তর পেয়ে যাবেন! এখানেই আয়রন ম্যান সিনেমার টনি স্টার্ক এর সাথে তার মিল, টনি স্টার্ক যেমন আয়রন ম্যান সিনেমায় কিডন্যাপ হয়ে গোহাতে থাকা অবস্থায় নিউক্লিয়ার রিয়েক্টর বানিয়ে ফেলেছিলেন যা কিনা কেবল মুভিতেই সম্ভব, তেমনি ল্যাম্বরগিনি ও নির্জন দ্বীপে থাকা অবস্থায় গাড়ি নির্মাণে তার হাতে খড়ি করেছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ফেরুসিও ল্যাম্বরগিনি মেকানিক হিসেবে যে অভিজ্ঞতা বানিয়েছিলেন তা যুদ্ধের পর বাড়ি ফিরে এসে কাজে লাগাতে শুরু করেন।
যুদ্ধের পর তিনি নানা পরিত্যক্ত যানবাহনের নানা যন্ত্রাংশ জোগাড় করে শুরু করে দিলেন তার নামের ব্র্যান্ডের ট্রাক্টর বানানো। যা বাজারে তখনকার সময়ে প্রচুর নামডাক করে।আর অল্প সময়ের মাঝেই ফেরুসিও ল্যাম্বরগিনির ভাগ্য খুলে যায়। শুরু হয় ল্যাম্বরগিনি ব্র্যান্ডের। তখনকার সময়ে বিখ্যাত ব্র্যান্ড ফেরারীর ২৫০জিটি মডেলের একটি গাড়ির মালিক ছিলেন ফেরুসিও ল্যাম্বরগিনি । তার গাড়িতে সমস্যা হওয়ায় সে একদিন তার গাড়িটিকে মেরামত করারনোর উদ্দেশে ফেরারীর হেড কোয়ার্টার এ নিয়ে যান। সেখান থেকে গাড়িটি মেরামত করে পাঠানোর পর তিনি দেখলেন যে তার গাড়িটিতে যে পার্টসটি বদলিয়ে লাগিয়ে দেয়া হয়েছে তা তিনি নিজের কোম্পানির ট্রাক্টর বানাতে ব্যবহার করেন। এটা দেখে তিনি এঞ্জো ফেরারীকে পার্টসটি বদলিয়ে দেয়ার জন্য বিনীতভাবে বলেন । এতে এঞ্জো ফেরারী ক্ষেপে যায় এবং ক্ষেপে গিয়ে তাকে বলে “ তুমি একজন ট্রাক্টর নির্মাতা তুমি কি বুঝব স্পোর্টস কার এর!” এ কথাতেই কেল্লা ফতে! ফেরুসিও ল্যাম্বরগিনি এই অপমান ম্যানে নিতে পারেননি ।
বাড়িতে এসেই শুরু করলেন নিজের কোম্পানির জন্য স্পোর্টস কার এর এর ডিজাইন। আর মাত্র চার মাসের মধ্যেই বানিয়ে ফেললেন নিজের কোম্পানির প্রথম স্পোর্টস কারটি। তার বানানো প্রথম ল্যাম্বরগিনি গাড়িটির মডেল ছিল “ল্যাম্বরগিনি৩৫০জিটিভি(পরে হয় জিটি)। তারপর তার আবিষ্কৃত দানব আত্মপ্রকাশ করল জেনেভা মোটর শো-এ। প্রশংসা পেল সংবাদমাধ্যমের। ক্ষতির মুখোমুখি হতে হবে জেনেও স্রেফ প্রতিযোগিতায় ফেলার জন্য গাড়ির দাম ফরারির চেয়ে ছিল বেশ কম। এই গাড়ি ফলে দু’বছরের মধ্যে বিক্রি হয়ে গেল ১২০টা।
ল্যাম্বরগিনি এবং এর ইতিহাস নিয়ে
পঞ্চাশ ছোঁয়ার আগেই ল্যাম্বরগিনি ছুঁয়ে ফেললেন ফেরারির আর্থিক সম্পত্তির পরিসংখ্যানকে। ল্যাম্বরগিনি সংস্থাও সেই আভিজাত্যের মুকুট পরল, যা এত দিন ফেরারির ছিল। পরবর্তী কালে ইতালির বিরাট অঞ্চলে শিল্পশহর গড়ে তোলেন এই স্বপ্নদ্রষ্টা মানুষটি।
অন্য আরেকদিন ল্যাম্বরগিনির আরো ডিটেলস নিয়ে লিখব।
লিখেছেন:Ah Turab
ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
ধন্যবাদ।